বুক রিভিউঃ গর্ভধারিনী
(চরিত্র বিশ্লেষণ)
বইয়ের নামঃ গর্ভধারিণী
লেখকঃসমরেস মজুমদার
গল্পটা চাররকম পরিবেশে বেড়ে ওঠা চার তরুণের বন্ধুত্বের গল্প।শুধু সমাজকে বদলানোর উদ্দেশ্যের জন্য ই পুরো ভিন্ন চারটা চরিত্রের একসাথে চলার গল্প।
আজকে এই উপন্যাসের গল্প নিয়ে লিখবো না....গল্পের চার তরুণের চরিত্র কে আমার দৃষ্টিভঙ্গির দিক দিয়ে লিখবো)
-------------------------------------------------
১.আনন্দঃ একদম perfect gentleman যাকে বলে আর কি।কোন দোষ খুঁজে বের করা যাবে না তার।কখন কোন ডিসিশন নিতে হবে ঠাণ্ডা মাথায়, আনন্দর চেয়ে ভাল মনে হয় কেউ জানেনা...leadership কেউ আনন্দর কাছ থেকে শিখুক।যেকোনো পরিবেশে মাথা এতো ঠাণ্ডা!!ভাবা যায়!!
সৎ,নিষ্ঠাবান,চরিত্রবান যতরকম positive adjective আপনি জানেন, সব আনন্দর জন্য প্রয়োগ করতে পারবেন আপনি।
সমরেস মজুমদার এতো perfect একটা ছেলের কল্পনা করলেন কিভাবে বুঝলাম না😂
যাই হোক,আমার কেন জানি এতো perfect মানুষ পছন্দ না।মানুষের একটু তো দোষ থাকবে।সবসময় তো একজন সঠিক হতে পারে না।আনন্দর চরিত্র টা অনেক দারুণ, শুধু এই সবসময় perfect image এর জন্য ই আমার কিছু কিছু জায়গায় বিরক্ত লেগেছে।মানুষ এতো perfect হয় নাকি!!😏
২.জয়ীতাঃ অনেক বড়লোকের মেয়ে।বাবা মা থাকে নিজেদের মতো,জয়ীতা থাকে নিজের মতো।
একদম টমবয় টাইপের মেয়ে।নিজেকে মেয়ে ভাবতেই পারেনা।ছেলেদের মত বেষভুষা,স্বভাব একদম মেয়েদের মতো না।ছেলে মেয়ে সমান তত্ত্বে বিশ্বাসী।
আমার মনে হয়েছে শরৎচন্দ্রের নায়িকার চরিত্রের পুরো উল্টো আরকি।😂
তবে গল্পের শেষের দিকে লেখক এইটা বুঝিয়েছেন যে সব মেয়েদের মধ্যেই একটা সহজাত মেয়েলী ভাব থাকে।এই ব্যাপারটা আমার ভাল লেগেছে।কিন্তু শেষের দিকে জয়ীতা নিজেকে একদম দেবী টাইপ আসনে বসিয়ে ফেলেছে। অনেক বিরক্ত হয়েছিলাম এইটাতে🙄Infact,ওর শেষের কর্মকাণ্ডের জন্য ই পুরো গল্পের প্রথম দিকের আমেজ আর পাইনি।মেজাজ খারাপ হয়েছিল।🙄
৩.কল্যাণঃ একদম typical lower middle class family এর প্রতিনিধি এই কল্যাণ...নিজেকে একদম আলাদা ভাবা,নিজেকে ছোট মনে করা,ভীতু,আর অনেক স্বার্থপর একটা চরিত্র।।
প্রথম প্রথম আমার মনে হয়েছিল একটা মানুষ এতোটা বিরক্তিকর কিভাবে হতে পারে!!কিন্তু পরে বুঝলাম,কেউ যদি এইরকম পরিবেশে মানুষ হয়,যে কারো মধ্যেই এইরকম complex মানষিকতা তৈরি হওয়া খুব স্বাভাবিক।
কল্যাণ চরিত্রে দারুণ একটা twist আছে।বিশেষ করে কল্যাণের যে শেষ পরিণতি,তার পরে আপনি ওকে নায়কও ভেবে বসতে পারেন,অসম্ভব না।প্রথম দিকের ধারণা ১৮০° তে ঘুরে যেতে পারে।
৪.সুদীপঃ প্রচণ্ড ইয়ার্কিবাজ ছেলে,সুদর্শন(এইটা গল্পে বেশ কয়েকবার লেখক লিখেছেন),বন্ধুর জন্য নিবেদিত প্রাণ।
অনেক বড়লোক বাবার একমাত্র সন্তান।বাবা খোঁজখবর রাখেন না,মা প্রচণ্ড অসুস্থ।এইরকম ছেলে বিগড়ে যাওয়া স্বাভাবিক।সেই তুলনায় সুদীপ অনেক control এ আছে বলতেই হবে।
সবসময় cool মেজাজ,খুব serious টাইমেও ইয়ার্কি বন্ধ করতে পারে না।কোথায় জানি একজনের লেখাতে পড়েছিলাম,সুদীপের character টা এমন যে যেকোন বাঙ্গালি মেয়ে তার প্রেমে পড়তে বাধ্য।🤔
ব্যাপার টা এমন কিনা আমি জানিনা🙄
তবে সুদীপের মা মারা যাওয়ার পর একদম স্বাভাবিক আচরণ আপনাকে অবাক করবে।কিছু মানুষ আছে কাউকে নিজের দুঃখ বলতে পারে না।এরা নিজে নিজে ভাবে একরকম,কিন্তু করে একদম উল্টো কাজ।আসলে care করে কিন্তু দেখাবে damn care ভাব।সারাদিন এরা ইয়ার্কি ফাজলামি নিয়ে থাকে কিন্তু সবার অগোচরে কাঁদতেও পারে।আপনার হয়তো এদেরকে বাইরে থেকে দেখে মনে হবে, এর আবার দুঃখ আছে নাকি!!
সুদীপের চরিত্রের এই দিক দিয়ে "introvert" এর মতো স্বভাবটার জন্য ই কেন জানি সুদীপ ই আমার সবচেয়ে পছন্দের চরিত্র চার জনের মধ্যে।
যদিও একদম শেষের দিকে এসে সুদীপ চরিত্র টাকেই আমার অনেক বিরক্ত লেগেছে,মনে হয়েছিল থাপ্পর দিয়ে আসি😏লেখক ভাল করেন নি এইটা😏
বিঃদ্রঃ বইটা অনেক আগে পড়া।মনে হলো কিছু লিখি,তাই যতটুকু মনে আছে সে হিসেবেই লেখা।
লেখকঃ জোহরা ফাতেমা নিশাত

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন